Saturday, March 14, 2015

টুপি বানিয়ে দেশেইসফল

টুপি বানিয়ে দেশেই সফল

মোহাম্মদ আলম, টঙ্গী (গাজীপুর)


ভাগ্যোন্নয়নে ১৯৯৬ সালে দুবাই যান। দুই বছর কাজ করেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। চলে আসেন দেশে। পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত কাপড় বা ঝুট দিয়ে তৈরি করেন টুপি। প্রথমে ফেরি করে বিক্রি করলেও এখন সব টুপিই রপ্তানি হয় ভারতে। তাঁর দেখাদেখি কমপক্ষে আরও ২০ জন শুরু করেছেন টুপি তৈরির কাজ।
সফল এই ব্যবসায়ীর নাম মো. রফিক শেখ। বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায়। সেখানে আড়াই কাঠা জমির ওপর দোতলা বাড়ি করেছেন। ঢাকায় কিনেছেন চার কাঠা জমি। একমাত্র ছেলেকে কলেজে পড়াচ্ছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সবই করেছেন টুপি তৈরির কারখানার আয় থেকে। বর্তমানে ১২ জন কর্মচারী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন তাঁর কারখানায়।
যেভাবে শুরু১৯৯৮ সালে দুবাই থেকে দেশে ফেরেন রফিক। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন এরশাদনগরের ৪ নম্বর বস্তিতে। শ্যালক পিন্টু ঝুট থেকে টুপি বানিয়ে ব্যবসা করার পরামর্শ দেন। দুই হাজার টাকার একটি সেলাই মেশিন ও পোশাক কারখানার পাঁচ হাজার টাকার পরিত্যক্ত ঝুট নিয়ে শুরু করেন টুপি বানানোর কাজ। নাম দেন শাওন রিপা ক্যাপ হাউস। ভাড়া দুটি কক্ষের একটিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। অন্যটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টুপি বানানোর কাজ করতেন।
টুপির বাজারজাতপ্রথম দিকে টুপি বানিয়ে বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করতেন রফিক। তবে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। রফিক জানান, বছরের ১১ মাসে যে পরিমাণ টুপি বিক্রি হয়, ইজতেমার সময় তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এ জন্য ইজতেমার তিন মাস আগে থেকেই টুপি বানিয়ে মজুত করে রাখতেন। বর্তমানে টুপি বিক্রি নিয়ে আর ভাবতে হয় না। টুপিগুলো ভারতে রপ্তানি করা হয়।
প্রতিটি টুপি তৈরিতে কমপক্ষে ২৫ টাকা খরচ হয়। পাইকারি দরে তা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। কারখানার ১২ জন শ্রমিক প্রতি মাসে ৭২ হাজার টাকা মজুরি দিতে হয়। বর্তমানে প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে কারখানা থেকে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয় রফিকের।
টুপির প্রকারভেদ ও তৈরির কাঁচামালমূলত ভারতের ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের টুপি তৈরি করেন রফিক। এর মধ্যে রয়েছে নাইকি, রিবক, ফিলা, পোলো, প্লেন ক্যাপ ও সান ক্যাপ।
এসব টুপি তৈরিতে টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত ওভেন (জিনসের কাপড়) ব্যবহূত হয়। তা ছাড়া গ্যাবার্ডিন কাপড়, কটন (বখরম) কাপড়, বেলকো (টুপির পেছনের বেল্ট), সুতা প্রভৃতি কাঁচামাল চকবাজার থেকে সংগ্রহ করেন রফিক।
গড়ে উঠেছে আরও কারখানারফিকের সাফল্যে উৎসাহী হয়ে এরই মধ্যে টঙ্গীর এরশাদনগরে গড়ে উঠেছে আরও ২০-২৫টি কারখানা। প্রতিটি কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে কমপক্ষে পাঁচজন করে শ্রমিকের। সব মিলিয়ে কয়েক শ পরিবার উপকৃত হচ্ছে রফিকের দেখানো পথে। সাত-আটজন ব্যবসায়ী ভারত ও চীনে টুপি রপ্তানি করেন। বাকিরা দেশের বাজারে সরবরাহ করেন।
জননী ক্যাপ হাউসের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ জানান, রফিককে দেখে উৎসাহিত হয়ে তাঁর এক বছর পর থেকে তিনি টুপি তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ভারত ও চীনে টুপি রপ্তানি করেন। রফিকের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই তাঁর মতো ব্যবসা করছেন। অনেকেই তাঁর কাছ থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment